নমস্কার বন্ধুরা, আজ আমি তোমাদের সাথে আলোচনা করব ঈশ্বর গুপ্তের "পাঠা" কবিতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু ও প্রশ্ন উত্তর। ঈশ্বর গুপ্তের কবিতাগুলিতে কবি ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে সমাজের সত্য গুলিকে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন। কবিতাগুলির মাধ্যমে একধারে কাব্যরস এবং অন্যদিকে ব্যাঙ্গ রস পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।
ঈশ্বর গুপ্তের পাঠা কবিতার প্রশ্ন উত্তর - UGC NET Bangla syllabus Unit 3:
ঈশ্বর গুপ্তের "পাঠা" (পাঁটা )কবিতার বিষয়বস্তু:
কবি ভ্রমণ কালে আহার সম্বন্ধে অনেক কষ্ট পাইয়া পরে একটি পাঠা পাইয়া তৃপ্তির সহিত ভোজন পূর্বক এই কবিতা প্রণয়ন করিয়াছিলেন।।রস ভরা ছাগলের গুনো গান এই কবিতায় করা হয়েছে ।নিজের মূল্য দিয়ে সে দক্ষের প্রাণ বাঁচিয়েছিল ।তার চাঁদ মুখে চাপ দাড়ি ,গালে গোঁফ নেই।রসিয়ে খাওয়া হয় পাঁঠার মাংস। পাঠার মাংস খাবার নানা রকম বর্ণনা এই কবিতায় আছে ।সে মাংস সুস্বাদু ।প্রতিদিন সকালে ভক্তি ভাবে যে এই কবিতা পড়বে তার ৫৭ পুরুষ স্বর্গে চলে যাবে, কবি এমন কথা বলেছেন।"পাঠা" কবিতার চরণ বিশ্লেষণ:
- ছাগল ও তার মাংসের নানার ক্ষেত্রে অবদান তুলে ধরে কবি হাস্য রস পূর্ণ উপস্থাপনা করেছেন।
- "আনারস", "তোপসে মাছ " কবিতার মতনই "পাঠা" কবিতাতে প্রথমে কবি ছাগলের রূপ বর্ণনা করেছেন এবং পাঁঠার মাংসের গুণগান গেয়েছেন। তোপসে মাছ কবিতায় তোপসে মাছের আভিজাত্যকে প্রকাশ করা হয়েছে।যেমন: —
"এমন অমৃত ফল ফলিয়াছে জলে ।
সাহেবেরা সুখে তাই ম্যাঙ্গোফিশ বলে।।
ব্যয় হেতু কোনমতে না হয় কাতর ।
খানায় আনায় কত করি সমাদর"।।
- কিন্তু কবির বিশ্বাস মাছে ভাতে বাঙালি হলেও মাংসের তুলনায় ভালোবাসা কম। তাই পাঠা কবিতায় তিনি বলেছেন –
কিন্তু মাছ পাঁটার নিকটে কোথা রয় ।।
দাসদাস তস্য দাস তস্য দাস নয়।"
- এমন কি এই পাঠার এমন গুণ একযোগে কালীঘাটে মহাপ্রসাদ, সাহেবদের বড়দিনের প্রধান খাবার তালিকায় আছে এই পাঁঠার মাংস, আবার দক্ষরাজের মাথা যে ছাগলের মাথা তার জন্য পরিহাস প্রিয়তর নিদর্শন রেখেছেন এই কবিতায়। যেমন তিনি বলেছেন –"বাঁচালে দক্ষের প্রাণ নিজ মুন্ড দিয়া"।
- শুধু দক্ষের প্রাণ বাঁচানো নয় ,মর্তবাসীর উদরপূর্তির ও ছাগলের চামড়া দিয়ে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরি হয় যা বাজিয়ে দাসীরা দেবতাদের গুণ কীর্তন করে। তাই যারা নামাবলী পড়ে ছাগল মাংস নিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করেন তাদের গোড়ামী ঘোচানোর কথা বলেছেন ঈশ্বর গুপ্ত তার কবিতায়।
- তবে ঈশ্বর গুপ্ত যে প্রবল স্যাটারিস্ট ছিলেন তার নিদর্শন পাওয়া যায় এই লাইনগুলিতে। যেমন– "এক, দুই ,তিন , চারি ছেড়ে দেখ ছয় ।
- পাঁচেরে করিলে হাতে রিপু রিপু নয় ।।"
- এই মদ রিপু নয় বলে জানিয়েছেন কবি। আর মদ্যপান পাঁঠার মাংস ছাড়া অসম্পূর্ণ। আসলে কবি সুরা পান করতেন এই নিয়ে লোকে নিন্দা করত। কবিতায় পাঠার গুনো গান বর্ণনা করে হাস্যকরের মধু দিয়ে তাদের ব্যঙ্গ করেছেন।।
পাঠা কবিতার প্রশ্ন উত্তর:
- পাঠা কবিতার চরম সংখ্যা ১২৪টি ।
- প্রথম চরণ –রস ভরা রস ময় রসের ছাগল।
- শেষ চরণ –৫৭ পুরুষ তার স্বর্গে যাবে চলে।
- ছাগলের হাড় ছাল লোম দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানোর কথা আছে। যেমন হাড় দিয়ে মালা তৈরি হয়, ছাল দিয়ে কুড়া জ্বালীয় যন্ত্র তৈরি হয়, লোম দিয়ে তুলি তৈরি হয়।।
- কবিতায় পাঠা কথাটি নয় বার আছে ।
- ছাগল কথাটি দুবার আছে।
- ছাগ কথাটি আটবার আছে।
- ছাগী কথাটি দুবার আছে।
- খাদ্যবস্তু বিষয়ক কবিতা হল ঈশ্বর গুপ্তের এই পাঠা কবিতাটি ।
- ঈশ্বর গুপ্ত এর পাঠা কবিতায় জরা মৃত ব্যাধিকে ত্রিতাপ বলা হয়েছে ।
- ঈশ্বর গুপ্ত পাঠা কবিতাটির একটি ভিন্ন পাঠ হল পাঁটা।।
- যে কাব্যের অনুসরণে ঈশ্বর গুপ্ত পাঁঠার মহিমা কীর্তন করেছেন সেটি হল কাশীরাম দাসের মহাভারত।।
পাঠা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ লাইন:
- "রসময় রসময় রসের ছাগল"।।
- "৫৭ পুরুষ তার স্বর্গে যাবে চলে"।।
- "স্বর্গ এক উপসর্গ ফলে তাহে কলা"।।
- "পরম বৈষ্ণবী যিনি দক্ষের দুহিতা"।।
- "ঝোলমাখা মাস নিয়া চাটি করে চাটি"।।
- "জানেন কিঞ্চিত গুণ ভাড়েঁ মা ভবানী"।।
- "মহিমায় নাম ধরো শ্রী মহাপ্রসাদ"।।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any questions please ask