নমস্কার বন্ধুরা, আশা করি তোমরা সকলেই ভালো আছো। Bangla UGC NET Unit 3 "কাব্য কবিতা" অধ্যায় থেকে ঈশ্বর গুপ্তের "তত্ত্ব" কবিতার প্রশ্ন উত্তর আজকে আমি আলোচনা করব। তোমরা এখানে পেয়ে যাবে কবিতার বিষয়বস্তু, পংক্তি বর্ণনা ,ছোট প্রশ্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ কবিতার লাইনগুলি। ভালো করে খুব মন দিয়ে বিষয়গুলি মুখস্থ করে নেবে। কবিতাটি খুব ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রতিটি লাইন মুখস্ত করতে হবে। তাহলে তোমাদের কোনরকম প্রশ্নের উত্তর দিতে অসুবিধা হবে না। কবিতাটি থেকে সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আমি আলোচনা করেছি।
ঈশ্বর গুপ্তের তত্ত্ব কবিতার প্রশ্ন উত্তর -Bangla UGC NET Unit 3
তত্ত্ব কবিতার বিষয়বস্তু:
কলেবর কুটিরে তস্কর হলো ইন্দ্রিয় সমস্ত জীবেরা অজ্ঞান হয়ে আছে ।তারা কেউ শিবের সন্ধান করে না। যাদের জ্ঞান আছে তারাই মানুষ বাকি সব পশু। জ্ঞান ছাড়া মানুষের ও পশুতে কোন তফাৎ নেই। তাদের সমস্ত কিছুই এবা। হোম ,যজ্ঞ করে পূজার্চনা করে আবার তারাই মানুষকে ঠকায় ।মানুষ নিজে সংসারের মধ্যে সুখ খোঁজে ।শুধু পড়ে কোন লাভ নেই যদি তার মর্ম না বোঝে। জ্ঞানীরা স্বাস্থ্য ছেড়ে জ্ঞানকে গ্রহণ করে যেমন পল ফেলে কৃষকেরা ধান নেয়।।
- তত্ত্ব কবিতার অর্থ হলো প্রদর্শিত জিনিসকে পর্যবেক্ষণ করা অর্থাৎ যা দেখানো হচ্ছে তাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা বা খুঁটিয়ে দেখা।
- প্রদর্শিত জিনিস থেকে ধারণা নিয়ে নেওয়া তা অনুমান করেই হোক বা পরীক্ষা করেই হোক। তবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও দার্শনিক যুক্তি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে আমরা তত্ত্ব প্রয়োগ করে থাকি। তবে সব ক্ষেত্রেই তত্ত্ব বলতে এটাই বোঝায় যে কোন পদ্ধতি ও তার প্রকাশের রূপ যা বাস্তবে নিয়মকে অনুসরণ করে চলে।
- তত্ত্ব তল্লাশ বলতে বোঝানো হয়েছে যা প্রদর্শিত হচ্ছে তাকে নিরীক্ষণ করা।
- ঈশ্বর গুপ্ত তার তত্ত্ব কবিতায় বক্তব্য প্রকাশ করেছেন যে –তিনি যুগসন্ধিক্ষণের কবি অর্থাৎ মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ ছাড়া তার কবিতায় ধর্ম ও বিজ্ঞান কে একই ছাদনাতলায় এনেছেন তিনি । তত্ত্ব কবিতার বিষয়বস্তু তাই।
- মানুষের শরীরের মধ্যে পঞ্চ ইন্দ্রিয়গুলি চোরের মত প্রবল বলশালী ,ধর্ম, দর্শন সমস্ত কিছুকে হরণ করেছে। কেউ সেই জিনিসগুলিকে দেখছে না পর্যবেক্ষণ করছে না চুরি করে একটা জায়গায় সঞ্চয় করে রাখার ভাবনা চলছে।
- কিন্তু কি চুরি করছে তার ভেতরে আদৌ কিছু আছে কিনা সেটা দেখার ক্ষমতা তাদের নেই। তারা শুধু অন্ধ অনুসরণ করে চলেছে।
- মানুষ নিজের ঘর সম্পর্কে আত্মসচেতন নয় কিন্তু পরের জিনিস চুরি করতে সবসময় ব্যস্ত। অন্যের প্রতি আগ্রহী ।যেমন– ঈশ্বর গুপ্তের সময়কালে লোকজন ইংরেজদের আদব-কায়দা পোশাক পরিচ্ছদ ইত্যাদি গ্রহণ করতে ব্যস্ত। কিন্তু নিজের দেশের আদব-কায়দা, সুমিষ্ট ভাষা ,পোশাক পরিচ্ছদকে অবজ্ঞা করত ।তাই ঈশ্বর গুপ্ত প্রশ্ন করেছেন–
" নর যদি রিপুজয়ী জ্ঞানেতে না হবে।
পশুর সহিত তার ,প্রভেদ কি তবে"?
অর্থাৎ মানুষের সাথে পশুর তফাৎ তার বিদ্যা ও বুদ্ধিতে ।মানুষ যদি এগুলোর মাধ্যমে তার রিপুকে জয় করতে না পারে তাহলে মানুষের সাথে পশুর পার্থক্য কোথায় থাকবে।
- পশু আক্রমণ করে জয় করে আর মানুষ বিদ্যা বুদ্ধি দিয়ে জয় করে। আর মানুষ যদি সেগুলোকে প্রয়োগ না করে তাহলে উভয়ের কোন তফাৎ থাকে না ।
- পশু বা মানুষ উভয় তাদের স্বভাব বসে কার্য করে অর্থাৎ খাওয়া পড়া নেই কিন্তু শত্রুকে পরাজিত করতে হলে পশু আক্রমণ করে এবং মানুষ বুদ্ধির আশ্রয় নেয় কিন্তু বর্তমানে মানুষ তাদের অন্তরের বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে হাত পা মুখের ক্রিয়াতেই ব্যস্ত। ঝগড়া মারামারি করে।ফলে কবি মানুষ ও পশুর মধ্যে তফাৎ খুঁজে পাচ্ছেন না অর্থাৎ মানুষ তাদের অন্তরস্থ জীবন ও প্রতিভা ভুলে গেছে। কারণ তারা আত্মসচেতন নয় দেখনদারিতে প্রলুব্ধ হয়েছে।পরবর্তী স্তবকে তার এই আরেকটি দিক তুলে ধরেছেন। যেমন–
"ডাক ছেড়ে মন্ত্র পড়ে, হোম করে কত।.....
অথচ সে আপনারে কভু নাহি জানে"।।
- পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ কারী মানুষগুলোর পাশে রক্ষণশীল সমাজকেও একই জায়গায় দাড় করাচ্ছেন কবি।
- "তত্ত্ব" কবিতার মধ্যে দিয়ে তারা শাস্ত্র আলোচনা করেন। শাস্ত্রের বিধি নিষেধের অন্ধ অনুকরণ করে। তারা সাধু সন্ন্যাসী হয়ে আচার নিয়ম পালন করেন। যজ্ঞ করেন, মন্ত্র পড়েন ।এখানেও সেই অন্ধ অনুকরণ প্রকাশ পাচ্ছে। অথচ সেই আত্ম সচেতনতার অভাব সত্য বচনের প্রকৃত অর্থ তারা বুঝতে চায় না ।
- শাস্ত্রে উল্লেখিত ক্রিয়া কার্যের প্রতি তাদের আসক্তি তাই কবিতায় কবি জানিয়েছেন অর্থাৎ ক্রিয়াধিপতি আতিশজ্জায় কর্ম ও ব্রহ্ম দুজনারি পতন ঘটে।
- সংসারে সে সমস্ত রকম কাজ করে অথচ লোকের কাছে বলে আমি ব্রাহ্মণ।
- ব্রহ্ম জ্ঞানী হওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে যে তফাৎ সে স্বীকার করে না। তার মধ্যে ঈর্ষা ,রাগ ,অভিমান সব রয়েছে ।সহজ সরল জীবনে সে অভ্যস্ত নয় অথচ সে ব্রহ্ম জ্ঞানী ।এর ফলে তার কাজের ফল ও পায়না এবং ব্রহ্ম জ্ঞানে যে যে উপলব্ধি করেছে তার মর্মার্থ বুঝতে পারে না। ফলে দুটো জিনিসেরই পতন ঘটে।
•একই ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে তার পরবর্তী স্তবকে। যেমন–
"বোঝা বোঝা পুঁথি পড়ে, মর্ম নাহি লয়।....
অবোধের পাঠ আর,অন্ধের দর্পণ।"
- অর্থাৎ মর্ম না বুঝে পড়া অনুকরণ করা এগুলি বৃথা। এগুলি কাজেও লাগে না ,জীবন সমৃদ্ধ হয় না। কেবলমাত্র আয়ু ক্ষয় হয় ।নিজেকে প্রকৃতভাবে জানা যায় না। আসলে ঈশ্বর গুপ্ত এই কবিতার মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন এইসব দেখনদারী ও ক্রিয়া দিয়ে নাগপাশে মানুষ নিজেকে চিনতে পারছে না অর্থাৎ আত্ম সচেতন নয়। অর্থাৎ নিজেকে চেনার মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর গুপ্ত কি বোঝাতে চেয়েছেন কেমনে অজ্ঞান আপনারে শিব অর্থাৎ প্রতিটা মানুষের মধ্যে শিব বাস করে। সেই শিবত্বেই মানুষকে প্রকৃত মানুষ গড়ে তোলে অথচ মানুষ এই সাধারণ তথ্য উপলব্ধি করতে পারছে না ।
- শাস্ত্রের বচন এবং অন্ধ অনুকরণ ইত্যাদির আতিশয্যে সে নিজের প্রতি আত্ম সচেতন নয় ।কবি এই শিবত্ব কে উপলব্ধি করার পথ বাতলে দিচ্ছেন এই কবিতার শেষে । যেমন –
"শাস্ত্র পড়ে বিদ্যা শিখে ,ঘোচেনা বন্ধন।
মুক্তির কারণ শুধু একমাত্র মন।।"
- অর্থাৎ চোখ কান খোলা রেখে মনের দরবারে বিচার করার কথা বলেছেন কবি। মানুষের মানুষ কে প্রেম ও ভক্তির মধ্য দিয়ে ,মানুষ নিজের মধ্য দিয়ে উপস্থিত শিবের অনুসন্ধান করতে পারবে। আর তার পরমাত্মার মিলন তখনই হবে।
- বিচার বিতর্ক এইসব মানুষকে জ্ঞানী করতে পারে না। চোখ কান খোলা রেখেই প্রকৃতি থেকে জ্ঞান গ্রহণের কথা বলেছেন।
- কৃষক ও ধান ছাড়া উচ্ছিষ্ট অংশকে গ্রহণ করে না কেবল সার অংশকেই নেয়। তেমনি কবি সমস্ত শাস্ত্র ছেড়ে প্রকৃত জ্ঞান গ্রহণ করতে বলেছেন ।
- প্রেম আর ভক্তি সহযোগে জ্ঞান চক্ষুর উন্মেলন করে নিজের মধ্যস্থিতকে পর্যবেক্ষণ করার কথাই হল তত্ত্ব।
তথ্য কবিতার প্রশ্ন উত্তর
- "তত্ত্ব"কবিতার পংক্তি সংখ্যা –৯৬ টি ।
- "তত্ত্ব" কবিতার স্তবক সংখ্যা – ১২ টি।
- "তত্ত্ব" কবিতার স্তবকের লাইন সংখ্যা – ৮ টি ।
- কলবর দেহকে– "কুটির" বলেছেন ঈশ্বর গুপ্ত তার রচিত "তত্ত্ব" কবিতায়।
- দেবতা হিসেবে –শিব ,দুর্গা ও হরির উল্লেখ আছে।
- "তত্ত্ব" কবিতার প্রথম লাইন –
- "কলেবর কুটিরেতে ইন্দ্রিয় তস্কর।
- ধরিয়া প্রবল বল আছে নিরন্তর।।"
- শেষ লাইন –
- "শাস্ত্র ছেড়ে জ্ঞানী করে জ্ঞানের গ্রহণ।
- কল ফেলে ধান্যলয় কৃষক যেমন"।।
- "তত্ত্ব" কবিতায় "তত্ত্ব "কথাটি আছে ৩ বার ।
- ঈশ্বর গুপ্ত "তত্ত্ব "কবিতায় মুক্তির মাত্র একমাত্র কারণ বলেছেন– মন।
- তত্ত্ব কবিতা অনুযায়ী শব্দবোধে হয়– বিদ্যার প্রকাশ।
★শাস্ত্র, অলংকার, পুরান, কাব্য, "তত্ত্ব" কবিতা অনুযায়ী ক্রমানুসারে সাজাও ?
উত্তর:কাব্য ,অলংকার, পুরান ,শাস্ত্র।
★শিব, দুর্গা, হরি ,বিষ্ণু কোন দেবতার উল্লেখ তত্ত্ব কবিতায় নেই?
উত্তর : বিষ্ণু।
★তত্ত্ব কবিতার ষষ্ঠী উল্লেখ আছে কত নম্বর স্তবকে?
উত্তর : ১১ নম্বর ।
★তত্ত্ব কবিতায় প্রকৃত জ্ঞানী কে তুলনা করেছেন?
উত্তর : কৃষকের সঙ্গে।
★ কবিতায় শাস্ত্র কথাটি আছে –১৫ বার।
★"তত্ত্ব" কবিতার কততম স্তবকে "পরদত্ত পরায়ন" কথাটি আছে?
উত্তর: তৃতীয় স্তবকে।
★মন্তব্য: " বৃদ্ধ হলে সে কখন চশমা না ধরে ।।"
★যুক্তি : " সহজেতে সমুদয় দৃষ্টি যেই করে।।"
★ মন্তব্য : "পশুর সহিত তার প্রভেদ কি হবে ?
★যুক্তি : "নর যদি রিপুজয়ী জ্ঞানেতে না হবে"।।
★শাস্ত্রালাপ, শাস্ত্র রূপ, সিন্ধুপার ,শাস্ত্র আলাপন শাস্ত্রের আলাপ , তত্ত্ব কবিতা অনুসারে সাজাও!
উত্তর : শাস্ত্র রূপ ,সিন্ধুপার ,শাস্ত্রের আলাপ,শাস্ত্রালাপ, শাস্ত্র আলাপন।
★তত্ত্ব কবিতায় শিবের উল্লেখ আছে –দুবার।
★ঈশ্বর গুপ্তের তত্ত্ব কবিতা অনুসারে মানুষ হ–ল যার নিজস্ব জ্ঞান আছে।
"তত্ত্ব "কবিতার গুরুত্বপূর্ণ লাইন:
★"শাস্ত্র পড়ে বিদ্যা শিখে ,ঘোচেনা বন্ধন।
মুক্তির কারণ শুধু একমাত্র মন।।"
★"নিজ জ্ঞান আছে যার, মানুষ সে হয়।
জ্ঞানহীন যত জীব পশু সমুদয়।।
★ হেঁটে না হোঁচট খায় চলে সেই তেজে ।
সে কি কভু ষষ্ঠী ধরে ষষ্ঠীবুড়ি সেজে?"
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
ইউজিসি নেট Bangla UGC NET পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আমার এই প্রচেষ্টাকে তোমরা আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার সাথে থেকো। উল্লেখিত ঈশ্বর গুপ্তের তত্ত্ব কবিতার প্রশ্ন উত্তর , বিষয়বস্তু এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, যেগুলো আমি আলোচনা করেছি সেগুলি প্রতিটি আমি নিজে থেকে পড়ে এবং বিভিন্ন লেখকের বই থেকে সংগ্রহ করেছি ।অনুগ্রহ করে যারা তোমাদের মত বাংলায় নেট পরীক্ষা দিতে চলেছে তাদের সাথে অবশ্যই এটি শেয়ার করে তাদেরকেও উপকার করার অনুরোধ রইলো। দয়া করে কেউ কপি করে অন্য ওয়েবসাইটে আপলোড করবেন না। পড়াশোনায় থাকুন। ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ।।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
If you have any questions please ask